নুরুল আবছার :

কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা হচ্ছে মহেশখালী । এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ । এটি মহেশখালী দ্বীপ নামেও পরিচিত। এই দ্বীপকে বর্তমান সরকার ডিজিটাল আইল্যান্ড নামে ঘোষনা করেছে।এছাড়া এই দ্বীপটি মিনি সিঙ্গাপুর নামে খ্যাতি অর্জন করেছে।এই দ্বীপের নাম করণ করা হয় বৌদ্ধ সেন মহেশ্ব এর নাম অনুসারে।১০৮ নামের মধ্যে “মহেশ” অন্যতম। পরবর্তী মহেশ থেকে মহেশখালী হয়।

মহেশখালী উপজেলায় ৮ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা রয়েছে। ইউনিয়ন সমূহ হলোঃ মাতারবাড়ি,ধলঘাটা,হোয়ানক, কালারমারছড়া,বড় মহেশখালী, কুতুবজোম ও ছোট মহেশখালী।

মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী রয়েছে কোহুলিয়া নদী।যেটি বঙ্গোপসাগরের একটি শাখা।এই নদীটি এখন প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে।মহেশখালী দর্শনীয় স্থানগুলো হলোঃ আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকত, বড় রাখাইন পাড়া বৌদ্ধ মন্দির, লিডারশীপ ইউনিভার্সিটি কলেজ,নতুন জেটি,জমিদারবাড়ি, উপজেলা পরিষদ দীঘি, চরপাড়া সী-বিচ,প্যারাবন,চিংড়ী ঘের ও মৈনাক পাহাড়।

মহেশখালী দ্বীপ এবং সমুদ্রের মাঝখানে আদিনাথ পাহাড়টির নাম মৈনাক পাহাড়। আদিনাথ মন্দির সমুদ্রস্তর থেকে প্রায় ২৮৮ ফুট উঁচু মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। উপমহাদেশের আদি তীর্থস্থান হিসেবে প্রত্যেক হিন্দু এখানে পূজা করে। এই মন্দির কমপ্লেক্সে আছে একটি মসজিদ ও একটি বৌদ্ধ বিহার।

মৈনাক পাহাড়ের পূর্ব পার্শ্বে প্যারাবনের মধ্যে রয়েছে নতুন জেটি। যার সৌন্দর্য দর্শকদের মুগ্ধ করে দেয়।

সোনাদিয়া দ্বীপটি কুতুবজোম ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি জীববৈচিত্রের দ্বীপ নামেও পরিচিত। এ দ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য অন্যতম পর্যটন স্থান। চারদিকে গভীর সমুদ্রের সাগরের ঢেউ সমৃদ্ধ। এ দ্বীপ চারদিকে প্যারাবন দিয়ে গেরা তাই এ দ্বীপকে প্যারাদ্বীপও বলে থাকে। এ দ্বীপের আয়তন ৯ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপে যাতায়াতের প্রধান সড়ক হচ্ছে ১ টি।যেটি ঘটিভাঙ্গা থেকে সোনাদিয়া পর্যন্ত সংযুক্ত হয়েছে।এটি একটি কাঁচা সড়ক।

১৯৫৪ সালে মহেশখালী থানা গঠিত হয়।মহেশখালী থানাকে ১৯৮৩ সালে ১৫ ডিসেম্বর উপজেলায় রুপান্তর করা হয়।

মহেশখালী দ্বীপে আরো ৩টি ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে।এগুলো হলোঃ সোনাদিয়া, ধলঘাটা,মাতারবাড়ি। কক্সবাজার সদর থেকে মহেশখালী উপজেলার দূরত্ব প্রাই ১৫ কিলোমিটার। এই উপজেলায় উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে ২টি পাকা সড়ক রয়েছে। বদরখালী ব্রিজ নির্মাণের ফলে মহেশখালী মূল ভূখণ্ডের সাথে সরাসরি যুক্ত হয়েছে।

এছাড়া এ দ্বীপে জলপথেও যাতায়াত করা যায়।সড়কপথে চলাচল করে জীপ,ট্রাক, অটোরিকশা, টেম্পো ইত্যাদি। জলপথে চলে মালবাহী ট্রলার, স্পীডবোট,যাত্রীবাহী লঞ্চ,নৌকা ইত্যাদি। ফলে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মহেশখালী দ্বীপে যাতায়াত সম্ভব।

এই দ্বীপের আয়তন প্রায় ৩৮৮.৫ বর্গ কিলোমিটার। এর জনসংখ্যা প্রায় ৩,২১,২১৮ জন।তারমধ্যে পুরুষ ১,৬৯,৩১০ জন এবং মহিলা ১,৫১,৯০৮ জন।মোট জনসংখ্যার ৯০.০৮% মুসলিম, ৭.৮০% হিন্দু, ১.৩০% বৌদ্ধ এবং ০.৮০% অন্য ধর্মাবলম্বী(২০১১ পরিসংখ্যান)।

মহেশখালী উপজেলার অধিকাংশ লোক শিক্ষিত। এ উপজেলায় ১টি সরকারি কলেজ, ১টি বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজ, ১টি ফাজিল মাদ্রাসা, ৬টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, ৪টি আলিম মাদ্রাসা, ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৫টি দাখিল মাদ্রাসা,৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৬০০টি মসজিদ, ১৫টি মন্দির ও ৫টি বিহার রয়েছে।এই উপজেলায় প্রায় ২৭টি হাটবাজার রয়েছে এবং বাৎসরিক ১টি মেলা বসে।যেটি আদিনাথ মেলা নামে পরিচিত। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের যেকোনো দিন থেকে শুরু করে প্রায় ১০/১৫ দিন পর্যন্ত এই মেলাটি চলতে থাকে।মিষ্টি পানের জন্য মহেশখালী দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম। এছাড়া মাছ, চিংড়ী, শুটকি, লবণ এবং মুক্তার উৎপাদনে মহেশখালী উপজেলাকে আলাদা করে পরিচিত করেছে। লবণ ও পান এঔ দ্বীপের ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র। এছাড়া এই দ্বীপে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ বালি রয়েছে।

এই দ্বীপে এতকিছু থাকার সত্ত্বেও মহেশখালীর মানুষ ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ এপ্রিল দিনটি আজও ভূলতে পারে না। এদিন প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল মহেশখালী দ্বীপ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘণ্টায় ২০০-২৫০ কিলোমিটার বাতাসের গতি, পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রা ৭ মিটার পর্যন্ত। এ ঘূর্ণিঝড় কেড়ে নিয়েছে উপকূলের লক্ষ লক্ষ মানুষ ও পশুপাখির জীবন।

মহেশখালীর কৃতী ব্যক্তিক্ত বর্গগণ হলোঃ শহীদ মোহাম্মদ শরিফ, অজিত কুমার রায় বাহাদুর, ডাঃ অহিদুল হেলাল, ডাঃ মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম খান, অধ্যাপক ড. বদিউল আলম, কাওসার চৌধুরী, অধ্যাপক ড. সলিম উল্লাহ খান, অধ্যাপক ড. আনসারুল করিম, ড. রশিদ রাশেদ, ড. সাদাত উল্লাহ, ডাঃ ফাহমিদা রশিদ প্রমুখ।